পরমশূন্য তাপমাত্রা

পরমশূন্য তাপমাত্রা নিয়ে বিস্তারিত জানবো এখানে আমরা। চাপ অপরিবর্তিত রেখে যেকোনো গ্যাসের তাপমাত্রা – 273° C এ কমানো হলে চার্লসের সূত্রের সমীকরণ অনুযায়ী ঐ গ্যাসের আয়তন ম্যাথমেটিকালি শূন্য হবে। যেমন, চার্লসের সূত্র মতে,

Vt = Vo [(273 + t) / 273]

এখানে t = -273°C হলে, তখন V = Vo [ (273 – 273) / 273 ] = 0 হয়।

তাই, যে তাপমাত্রায় চার্লস বা গে-লুস্যাক-এর সূত্রানুসারে গ্যাসের আয়তন শূন্য হয়ে যায়, সে তাপমাত্রাকে পরমশূন্য তাপমাত্রা বলা হয়। অর্থাৎ,

পরমশূন্য তাপমাত্রার মান = -273.15°C বা -273°C

পরমশূন্য তাপমাত্রা এর তাৎপর্য

তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে একই পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা লাভ করতে পারে। পদার্থের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ ও অণুর গতীয় স্বাতন্ত্র্যমাত্রা দিয়ে তা ব্যাখ্যা করা যায়। অণুগুলোর তিন প্রকার গতি যেমন (i) কম্পন গতি, (ii) আবর্তন গতি ও (iii) স্থানান্তর গতি থাকতে পারে। তবে সব পদার্থের অণুসমূহ সর্বদা কম্পমান থাকে, তাপমাত্রার উপর কম্পনের পরিমাণ নির্ভর করে। তাপমাত্রা যত কম হয়, অণুর কম্পন তত কম হয়। এ কম্পন 273°C তাপমাত্রায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে। এ তাপমাত্রাকে 0 (শূন্য) কেলভিন বা পরম শূন্য তাপমাত্রা বলা হয়। এ তাপমাত্রায় সব বস্তু কঠিন পদার্থ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে অণুসমূহ কম্পন ও আবর্তন গতি লাভ করে, কিন্তু পারস্পরিক আকর্ষণের কারণে নিজ অবস্থান থেকে বিচ্যুত হতে পারে না।

এক সময় তাপশক্তি এত বেশি হয় যে, অণুসমূহ নির্দিষ্ট স্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে চলাচল করতে থাকে। অর্থাৎ অণুসমূহ স্থানান্তর গতি লাভ করে। তবে প্রতিটি অণুর উপর নিকটবর্তী অন্যান্য অণুর আকর্ষণের কারণে তা সম্পূর্ণ মুক্ত হয় না। এ অবস্থায় কঠিন বস্তু তরলে পরিণত হয়। আবার অধিক তাপমাত্রায় অণুসমূহের স্থানান্তর গতির মান আন্তঃআণবিক আকর্ষণের চেয়ে বেশি হলে, তখন তরল পদার্থ গ্যাসীয় অবস্থা লাভ করে।

পরমশূন্য তাপমাত্রা গ্যাসের প্রকৃতি ও চাপের উপর নির্ভর করে না। এই তাপমাত্রাকে পরমশূন্য বা absolute zero বলার বিশেষ কারণ হল চার্লসের সূত্র মতে, তাত্ত্বিকভাবে এ তাপমাত্রার নিচে আর তাপমাত্রা হতে পারে না। কারণ এ তাপমাত্রার নিচে গ্যাসের আয়তন ঋণাত্মক মানের হয়, যেটা কোনো বাস্তব কথা নয়! আবার, আজ পর্যন্ত কোনো গ্যাসকে পরমশূন্য তাপমাত্রায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরমশূন্য তাপমাত্রায় গ্যাসের স্থানান্তর গতি শূন্য হয়, গ্যাসের অণু গুলোর স্থানান্তর একেবারে নাই হয়ে যায়। এ সময় অণু গুলো পরস্পরের খুব কাছাকাছি আসে, ফলে গ্যাসের আয়তন অনেক কম হয়। পরমশূন্য তাপমাত্রায় আসার আগেই গ্যাস তরল বা কঠিন অবস্থা প্রান্ত হয়, অর্থাৎ পদার্থ কখনোই গ্যাস হিসেবে তখন থাকে না এবং আয়তনও কখন শূন্য হয় না।

পরমশূন্য তাপমাত্রা

শূন্য বিন্দু শক্তি

গতিতত্ত্বের স্বীকার্য মতে, যেহেতু অণুগুলোর গড় গতিশক্তি পরম তাপমাত্রার সমানুপাতিক, তাই গ্যাসের তাপমাত্রা কমার সাথে অণু গুলোর সব ধরনের গতি যেমন স্থানান্তর, আবর্তন ও কম্পন গতি কমে যায় এবং পরমশূন্য তাপমাত্রায় অণু গুলোর আবর্তন ও স্থানান্তর গতি থাকে না, শুধুমাত্র কম্পন গতি থাকে। পরমশূন্য তাপমাত্রায় কম্পন গতির জন্য পদার্থের যে শক্তি অবশিষ্ট থাকে, তাকে শূন্য বিন্দু শক্তি (zero point energy) বলা হয়।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *