অ্যানড্রুজের পরীক্ষা

অ্যানড্রুজের পরীক্ষা নিয়ে জানার চেষ্টা করবো এখন আমরা। যেহেতু একই বস্তু গ্যাস ও তরল দুটো অবস্থায় থাকতে পারে, সেহেতু গ্যাসকে তরলে এবং তরল পদার্থকে গ্যাসে রূপান্তর করা যায় এবং এ রূপান্তর একটি ভৌত পরিবর্তন। একইভাবে তরল পদার্থ হতে কঠিন পদার্থে রূপান্তর বা এর বিপরীত প্রক্রিয়াও ভৌত পরিবর্তন। তবে তরল থেকে কঠিনের রূপান্তর প্রধানত তাপমাত্রা নির্ভর। অপরদিকে গ্যাস থেকে তরল রূপাস্তর তাপমাত্রা ও চাপের উপর নির্ভর করে। সুতরাং দুটি ভিন্ন উপায়ে গ্যাসর্কে তরলে পরিণত করা যায়।

  • গ্যাসের তাপমাত্রা কমিয়ে
  • গ্যাসের উপর চাপ প্রয়োগ করে

প্রথমদিকে গ্যাসের উপর চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন গ্যাসকে তরলে পরিণত করতে গিয়ে দেখা যায় যে, অনেক গ্যাস বা বাষ্পকে এভাবে তরলে রূপান্তর করা গেলেও O2, N2, H2 প্রভৃতি কিছু গ্যাসকে প্রচুর চাপ প্রয়োগ করেও তরলে রূপান্তর করা যায়নি। সুতরাং তখন মনে করা হয়েছিল এরা চিরন্তন গ্যাস (Permanent gases) এবং এদের তরল অবস্থার অস্তিত্ব নেই। ১৮৬৩ সালে অ্যানড্রুজের পরীক্ষা থেকে বোঝা যায় যে, প্রতিটি গ্যাসীয় পদার্থের ক্ষেত্রে একটি ক্রাস্তি তাপমাত্রা আছে, যার উপরে সে পদার্থের গ্যাসীয় অবস্থাকে প্রচুর চাপ প্রয়োগ করেও তরলে রূপান্তর সম্ভব না।

 

অ্যানড্রুজের পরীক্ষা বর্ণনা

অ্যানড্রুজ CO2 গ্যাসের একটি নমুনা নিয়ে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তার উপর বিভিন্ন চাপ প্রয়োগ করেন ও এ সময় তার আয়তন লিপিবদ্ধ করেন। পরবর্তীতে পৃথক স্থির তাপমাত্রায় একই গ্যাসের উপর বিভিন্ন পরিমাণের চাপ প্রয়োগ করে গ্যাসের আয়তনসমূহ লিপিবদ্ধ করেন। এসব মান নিয়ে অ্যানড্রুজ লেখচিত্রে বিভিন্ন স্থির তাপমাত্রায় চাপ বনাম আয়তন রেখা অঙ্কন করেন। প্রতিটি রেখা বিভিন্ন স্থির তাপমাত্রায় গ্যাসের চাপ ও আয়তনের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্দেশ করে বলে এদেরকে সমতাপীয় রেখা (isothermal curves) বলা হয়।

অ্যানড্রুজের পরীক্ষা

কম তাপমাত্রা 13.1° C-এ, কম চাপ যুক্ত বিন্দু যেমন A বিন্দুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড সম্পূর্ণরূপে গ্যাসীয়। চাপ বাড়ালে গ্যাসের আয়তন মোটামুটিভাবে বয়েলের সূত্র অনুসারে কমতে থাকে, যা AB রেখা দ্বারা দেখানো হয়েছে। কিন্তু B বিন্দুতে গ্যাসটির তরলে রূপান্তর ঘটতে থাকে এবং আয়তন দ্রুত কমতে থাকে। C বিন্দুতে সম্পূর্ণ গ্যাস তরলে পরিণত হয়। এর পরের অত্যন্ত খাড়া রেখা CD নির্দেশ করে যে, তরল পদার্থকে অনেক বেশি চাপ প্রয়োগেও সহজে সঙ্কুচিত করা যায় না এবং প্রচুর চাপ বৃদ্ধির ফলে তরল পদার্থের আয়তন খুবই কম হ্রাস পায়।

মনে রাখতে হবে, রেখার AB অংশ শুধুমাত্র গ্যাসীয় অবস্থা এবং CD অংশ শুধুমাত্র তরল অবস্থা নির্দেশ করে। আবার, BC রেখা বরাবর গ্যাস ও তরল একই অবস্থানে থাকে, কিন্তু যেহেতু BC রেখা আয়তন অক্ষের সমান্তরাল, তাই বোঝা যায় যে- গ্যাস ও তরল এ দুটি অবস্থায় পদার্থের পরিমাণ যা হোক না কেন, একই অবস্থানে থাকা অবস্থায় চাপ স্থির থাকবে। এ চাপকে ঐ তাপমাত্রায় তরল পদার্থের বাষ্পীয় চাপ বলে। সুতরাং কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি তরল পদার্থ ও বাষ্প সাম্যাবস্থায় থাকলে তরলের উপর বাষ্পের যে চাপ থাকে, তাকে ঐ তাপমাত্রায় সে তরল পদার্থের বাষ্পচাপ (vapour pressure) বলা হয়।

215°C তাপমাত্রায় চাপ-আয়তন রেখার প্রকৃতি পূর্বের চাপ আয়তন রেখার মতন, শুধু পার্থক্য হচ্ছে যে, যে চাপে তরলীভবন ঘটে তা আগের চেয়ে বেশি এবং যে সমান্তরাল অংশে তরলীভবন ঘটে তার পরিসর ছোট হয়। প্রকৃতপক্ষে, তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে যে সমান্তরাল অংশে তরণীভবন ঘটে, তার পরিসর ক্রমশ ছোট হয়, যা ডটযুক্ত বক্ররেখা দ্বারা দেখানো হয়েছে এবং অবশেষে 31.1°C তাপমাত্রায় তা একটি বিন্দুতে পরিণত হয়। 31.1ºC তাপমাত্রার উপরে সমান্তরাল BC অংশের কোন অস্তিত্বই দেখা যায় না, অর্থাৎ তরলীভবনের কোন চিহ্নই দেখা যায় না। অ্যানড্রুজ দেখতে পান যে, এ তাপমাত্রার উপরে এমনকি 300-400 atm চাপ প্রয়োগ করেও CO2 কে তরল করা যায় না। যদিও 31.1°C তাপমাত্রার ঠিক নিচে 75 atm চাপে CO2 সম্পূর্ণরূপে তরলে পরিণত হয়।

 

অ্যানড্রুজের সিদ্ধান্ত

এই পরিক্ষা থেকে অ্যানড্রুজ কিছু সিদ্ধান্ত নেন-

  • CO2 এর ক্ষেত্রে তাপমাত্রার একটি সর্বোচ্চ সীমারেখা (অর্থাৎ 31.1°C) আছে, যার উপরে একে তরলে পরিণত করা সম্ভব নয়। পরবর্তীতে অন্যান্য গ্যাসের উপর পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, তারাও CO2 এর ন্যায় আচরণ করে।
  • প্রতিটি গ্যাসের একটি প্রান্তিক সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা আছে যার উপর গ্যাসটিকে প্রচুর চাপ প্রয়োগ করেও তরল করা যায় না। এ তাপমাত্রাকে সে গ্যাসের সন্ধি বা ক্রান্তি তাপমাত্রা বলা হয় এবং তা শুধুমাত্র গ্যাসের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।

অ্যানড্রুজের পরীক্ষা থেকে “চিরন্তন” গ্যাসসমূহের অবস্থাও বোঝা যায়। এ গ্যাসসমূহকে তাদের ক্রান্তি তাপমাত্রার উপরে পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাই প্রচুর চাপ প্রয়োগ করেও তাদেরকে তরলে রূপান্তর সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে কম তাপমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করে তথাকথিত “চিরন্তন” গ্যাসসমূহকেও তরলিত করা হয়েছে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *