ডাল্টনের আংশিক চাপ সূত্রের প্রয়োগ নিয়ে জানবো এখন আমরা। মূলত দুই ধরণের প্রয়োগ রয়েছে এই সূত্রের-
মিশ্রিত গ্যাসের চাপ নির্ণয়
পরস্পরের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে এ ধরনের বিভিন্ন গ্যাসকে একই তাপমাত্রায় কিন্তু বিভিন্ন চাপে বিভিন্ন পাত্রে রাখা হলে এবং এরপর এ পাত্রসমূহকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করে ঐ সব গ্যাসকে পরস্পরের সাথে মিশ্রিত করলে অথবা অন্য কোন পাত্রে মিশ্রিত করলে, তখন মিশ্রিত গ্যাসের চাপ বয়েলের সূত্র এবং ডাল্টনের আংশিক চাপ সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়।
মনে করি, একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি পাত্রে একটি গ্যাস আছে। পাত্রের আয়তন V1, সুতরাং গ্যাসের আয়তনও V1। ধরি ঐ গ্যাসের চাপ P। অপর একটি পাত্রের আয়তন V2। এতে অন্য একটি গ্যাস আছে, যার চাপ P2। এখন এই দুটি পাত্রকে একটি সরু নল দ্বারা সংযুক্ত করে গ্যাস দুটিকে মিশ্রিত হতে দেয়া হল। সুতরাং গ্যাস মিশ্রণের মোট আয়তন দাঁড়ায় (V1 + V2)।
অথবা এ দুটি পাত্র থেকে গ্যাস দুটিকে আরেকটি পাত্রে স্থানান্তর করে মিশ্রিত করা হলো, তখন ঐ পাত্রটির আয়তন হবে V1+ V2।
এবার মনে করি, মিশ্রিত অবস্থায় প্রথম গ্যাসের আংশিক চাপ P3 এবং দ্বিতীয় গ্যাসের আংশিক চাপ P4 এবং গ্যাস মিশ্রণের চাপ P। সুতরাং মিশ্রিত অবস্থায়-
১ম গ্যাসের আয়তন (V1 + V2) এবং আংশিক চাপ P3
২য় গ্যাসের আয়তন (V1 + V2) এবং আংশিক চাপ P4
যেহেতু তাপমাত্রা স্থির আছে, সেহেতু বয়েলের সূত্র অনুযায়ী,
প্রথম গ্যাসের ক্ষেত্রে-
P3 × (V1 + V2) = P1 x V1
or, P3 = P1 x V1 / (V1 + V2)
দ্বিতীয় গ্যাসের ক্ষেত্রে-
P4 x (V1 + V2) = P2 x V2
or, P4 = P2 x V2 / (V1 + V2)
আবার ডালটনের আংশিক চাপের সূত্র অনুসারে, গ্যাস মিশ্রণের চাপ-
P = P3 + Pa
or, P= [P1V1 / (V1+V2) ] + [P2V2 / (V1 + V2)]
or, P = (P1V1 + P2V2) / (V1 + V2) ——(1)
or, P x (V1 + V2) = (P1 x V1) + (P2 x V2) ——–(2)
এবার কয়েকটি গ্যাসের মিশ্রণের ক্ষেত্রে সমীকরণ (1) ও (2) নিম্নরূপ পরিবর্তিত হয়-
P = P₁V₁ + P₂V₂+ P₁V3 +….) / (V1 + V2 + V3 +….)
or, P (V1 + V2 + V3 +…..) = (P1V1 + P2V2 + P3V3 +…..)
যদি গ্যাস মিশ্রণকে এমন একটি পাত্রে স্থানান্তরিত করা হয়, যার আয়তন V, সেক্ষেত্রে ইতোপূর্বের হিসাবে (V1 + V2 + … ) এর জায়গায় V বসবে। সুতরাং সেক্ষেত্রে আমরা পাই,
P = (P1V1 + P2V2 + P3V3 + … ) / V
or, PV = (P1V1 + P2V2 + P3V3 +…..)
আর্দ্র গ্যাসের চাপ নির্ণয়
আমরা এবার ডাল্টনের আংশিক চাপ সূত্রের প্রয়োগ নিয়ে আরেকটা ক্ষেত্র দেখবো। যেকোন তাপমাত্রায় পানির বাষ্পচাপ থাকে, যা তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু যে কোন স্থির তাপমাত্রায় বাষ্পচাপের মান নির্দিষ্ট। যেকোন তাপমাত্রায় পানির বাষ্পচাপের মান পানির বাষ্পচাপ তালিকা থেকে পাওয়া যায়। পরীক্ষাগারে যখন কোন অদ্রবণীয় গ্যাসকে পানির নিম্নমুখী অপসারণের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় তখন সংগৃহীত গ্যাস জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত থাকে। যদি গ্যাস-পাত্রের ভেতরে ও বাইরে পানির পৃষ্ঠতল সমান করে সংগৃহীত গ্যাসের আয়তন মাপা হয়, তাহলে সংগৃহীত আর্দ্র গ্যাসের চাপ সে সময়কার বায়ুমণ্ডলের চাপের সমান হয়। কিন্তু এ চাপ সংগৃহীত মূল গ্যাসের সত্যিকার চাপ নয়। মূল গ্যাস শুষ্ক অবস্থায় এ আয়তনে যে চাপ দিত অর্থাৎ তার আংশিক চাপ এবং জলীয় বাষ্পের চাপ এ দুটি মিলে বায়ুমণ্ডলের চাপের সমান হয়েছে। মনে করি, পরীক্ষার সময় কক্ষতাপমাত্রা হল t°C। অর্থাৎ-
t°C তাপমাত্রায় শুষ্ক গ্যাসের চাপ + t°C তাপমাত্রায় জলীয় বাষ্পের চাপ = সে সময়কার বায়ুমণ্ডলের চাপ
বায়ুমণ্ডলের চাপ ব্যারোমিটার হতে জানা যায়। মনে করি, tºC তাপমাত্রায় এর মান P এবং পানির বাষ্পচাপ = f। শুষ্ক গ্যাসের চাপকে Pdry দ্বারা চিহ্নিত করলে-
Pdry + f = P
or, Pdry = P – f
তো এই দুটোই ছিলো ডাল্টনের আংশিক চাপ সূত্রের প্রয়োগ।