প্রাচীন গ্রিসে আজ থেকে ২৫০০ বছর পূর্বে লুসিপাস (Leucippus) ও তাঁর ছাত্র ডেমোক্রিটাস (Democritus) এ অভিমত প্রকাশ করেন যে, সব পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবিভাজ্য অংশ দ্বারা গঠিত। ডেমোক্রিটাস এ অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম অংশের নাম দেন atoma। এ শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ যেমন a (not) এবং temnein (to cut) হতে উদ্ভূত। অর্থাৎ atoma বলতে বোঝায় যা আর ভাগ করা যায় না। কিন্তু বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল (Aristotle) এর বিরোধিতার প্রভাবে এ মতবাদ চাপা পড়ে যায়। অ্যারিস্টটলের মতে পদার্থ নিরবচ্ছিন্ন, তাকে যত ইচ্ছা ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায়। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে atom মতবাদ আবার বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকগণের সমর্থন লাভ করে। অবশেষে ব্রিটিশ স্কুল শিক্ষক জন ডাল্টন (John Dalton) এ মতবাদকে বৈজ্ঞানিক মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ডাল্টনের পরমাণুবাদ এর প্রধান স্বীকার্যগুলো হচ্ছে নিম্নরূপ :
- প্রত্যেক পদার্থ পরমাণু নামক অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত।
- একই পদার্থের সব পরমাণুর ধর্ম ও ভর অভিন্ন।
- বিভিন্ন পদার্থের পরমাণুর ধর্ম ও ভর বিভিন্ন।
- পরমাণুসমূহ অবিভাজ্য ও তাদের ধ্বংস নেই।
- দুই বা ততোধিক পদার্থের পরমাণুর সংযোগে নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়। এ সংযোগ পূর্ণ সংখ্যার নির্দিষ্ট সরল অনুপাতে ঘটে।
- শুধু পরমাণুসমূহই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
- রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কোন পরমাণু ধ্বংস কোন নতুন পরমাণু সৃষ্টি হয় না। শুধু তাদের মধ্যকার সংযোগের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে।
ডালটনের মতবাদ রসায়নের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরি করে। এজন্য তাকে আধুনিক রসায়নবিদ্যার জনকও বলা হয়। কিন্তু তার এ মতবাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।
ডাল্টনের পরমাণুবাদ এর সীমাবদ্ধতা
এবার আমরা জানবো ডাল্টনের পরমাণুবাদ এর বেশ কিছু ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন-
- ডাল্টনের পরমাণুবাদে মৌলিক ও যৌগিক উভয় প্রকার পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণাকে পরমাণু বলা হয়েছে। বর্তমানে মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যা সাধারণত স্বাধীনভাবে অবস্থান করতে পারে না, তাকে পরমাণু বলে এবং মৌলের ও যৌগের স্বাধীন অস্তিত্বের ক্ষুদ্রতম অংশ হল অণু (molecule), যাকে বিভক্ত করলে পরমাণু পাওয়া যায়৷ অর্থাৎ ডালটনের মতবাদ অণু ও পরমাণুর মধ্যে পার্থক্য দেখাতে ব্যর্থ হয়।
- এ মতবাদ অনুসারে একই মৌলের পরমাণুসমূহ একই ভরবিশিষ্ট হওয়া উচিত। কিন্তু আইসোটোপ আবিষ্কারের ফলে প্রমাণিত হয় যে, একই মৌলের পরমাণুর ভর বিভিন্ন হতে পারে। যেমন হাইড্রোজেনের তিন প্রকারের ভরবিশিষ্ট আইসোটোপ পরমাণু আছে। তাদের ভর যথাক্রমে একক 2 একক ও 3 একক। যেমন- 11H, 21H, 31H
- ডালটনের মতবাদ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণুর ভর বিভিন্ন হবে। কিন্তু আইসোবার আবিষ্কারের ফলে প্রমাণিত হয় যে, তা সবসময় সত্য নয়। যেমন নিকেল, তামা ও দস্তা এই তিন মৌলের একটি করে আইসোটোপ আছে যেগুলোর প্রত্যেকটির ভর ৬৪ একক। যেমন, 6428Ni, 6429Cu, 6430Zn। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, এ মতবাদের প্রধান ভিত্তি অর্থাৎ পরমাণুর অবিভাজ্যতা বর্তমানে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। পরমাণু আর পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ নয়। যে কোন পরমাণু ক্ষুদ্রতর কতগুলো কণিকার সমন্বয়ে গঠিত এবং পরমাণুকে এ সব মূল কণিকায় বিভাজন করা সম্ভব।
- এছাড়া এক মৌলের পরমাণুকে অন্য মৌলের পরমাণুতে পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে। আবার বিশেষ বিশেষ মৌলের আইসোটোপ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্য পরমাণুতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তাদেরকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলা হয়।