ব্যাপন কাকে বলে নিয়ে জানার আগে কয়েকটা উদাহরণ দেখি। একটি বন্ধ ঘরের এক কোনায় একটি সেন্টের শিশি খুলে রাখ। কিছুক্ষণ পর দেখবে ঘরের অন্যত্রও সে সুগন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বাড়িতে পোলাও কোর্মা রান্না করলে তার সুগন্ধ সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একবার ভেবে দেখছ কি, এ সুগন্ধ একস্থান হতে আরেক স্থানে আসলো কীভাবে? প্রকৃতপক্ষে সুগন্ধযুক্ত বস্তুর অণুগুলো গ্যাসীয় অবস্থায় ক্রমে ক্রমে সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তোমার নাকে প্রবেশ করলে তুমি সে সুগন্ধ অনুভব কর।
আরেকটি পরীক্ষা কর। এক গ্লাস পানি নাও। তাতে একটি দানা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ছেড়ে দাও। পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট তোমরা যে কোনো ওষুধের দোকানে পাবে, তার বর্ণ তীব্র বেগুনি। দেখবে ধীরে ধীরে ঐ দানার নিকটে পানির রং বেগুনি হচ্ছে। ক্রমশ সে রং সম্পূর্ণ পানিতে ছড়িয়ে পড়বে, যদিও তুমি পানি কোনরূপ নাড়াচাড়া করছো না।
আরেকটি পরীক্ষা কর। এক গ্লাস পানি নিয়ে তাতে এক চামচ চিনি ফেলে দাও। পানি নাড়াবে না। একটু পরে উপর থেকে একটু পানি মুখে দাও। দেখবে কোনো যান নেই। গ্লাসটি না নেড়ে এভাবে রেখে দাও। পরদিন দেখবে চিনি প্রায় সম্পূর্ণরূপে পানিতে দ্রবীভূত হয়েছে এবং উপরের এক ফোঁটা পানি মুখে দিলে দেখবে তা মিষ্টি।
প্রথম পরীক্ষাতে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়া এবং ২য় ও ৩য় পরীক্ষাতে পানিতে পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, চিনি সমস্ত দ্রবণে ছড়িয়ে পড়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে মনে করতে হবে যে বস্তুগুলো অতি ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি। বাতাসে সুগন্ধির কণা এবং দ্রবণে উপরিউক্ত বস্তুর কণা ছড়িয়ে পড়েছে। যদি সুগন্ধি এবং চিনি ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের দানা অতিক্ষুদ্র কণার সমষ্টি না হত তাহলে সেগুলো ছড়িয়ে পড়া সম্ভব হত না। এ থেকে বুঝা যায় বস্তু নিশ্চয়ই অতি ক্ষুদ্র কণার সমন্বয়ে গঠিত, যার নাম দেয়া হয়েছে অণু বা পরমাণু। ফণাগুলো যে সুযোগ পেলেই গতি সম্পন্ন হয় তাও এ থেকে বুঝা যায়। ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ রবার্ট ব্রাউনের (Robert Brown) একটি পরীক্ষাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।

ব্যাপন কাকে বলে?
প্রতিটা পদার্থ অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু নিয়ে তৈরি। কঠিন পদার্থের অণু গুলো তেমন একটা নড়াচড়া না করলেও তরল ও বায়বীয় পদার্থের অণুগুলো নড়াচড়া করার ভালো সুযোগ পায়। তরল ও বায়বীয় পদার্থের অণুদের ঘনত্ব সব জায়গায় সমান থাকে না। কোথাও ঘনত্ব কম থাকে, কোথাও বেশি থাকে। তবে প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে বেশি ঘনত্বের অণুগুলো কম ঘনত্বের অণুর দিকে প্রবাহিত হয়।
উচ্চ ঘনত্বের স্থান থেকে নিন্ম ঘনত্বের স্থানে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর অণুসমূহ বা কণাসমূহের স্বতঃস্ফূর্ত ও সমভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে।
যেসব অণুগুলোর মধ্যে ব্যাপন ঘটে সেসব অণুগুলোর মধ্যে এক ধরনের গতিশক্তি কাজ করে। যার ফলে অণুগুলো বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের স্থানে চলে যায়। এই গতিশক্তির জন্য এক ধরনের চাপ তৈরি হয় যাকে ব্যাপন চাপ বলে। তাহলে বোঝা গেলো ব্যাপন কাকে বলে।
এবার ব্যাপনের কিছু বাস্তব উদাহরণ দেখবো-
- ঘরে সেন্ট বা আতরের মুখ খুলে রাখলে সেটার ঘ্রাণ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
- আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
- ভালো রান্না করলে তার সুবাস পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।
- পাতা পোড়ালে সেটার ধোঁয়া চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
- পরিষ্কার পানিতে একফোঁটা নীল রঙ ঢেলে দিলে সেটা পানির মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।
- একটি পাত্রে কিছু পানি নিয়ে তাতে পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (KMnO4) এর কয়েকটি দানা ছেড়ে দিলে দেখা যায় ধীরে ধীরে দানাসমূহের আশেপাশে পানির বর্ণ বেগুনি হচ্ছে। পানিকে কোনরূপ নাড়াচাড়া না করা হলেও এখানে পানি অণুর মধ্যে ব্যাপন ঘটে। তাই ব্যাপনের ক্ষেত্রে মাধ্যমকে যে গতিশীল থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই।