হাইড্রোকার্বনের সংকেত

শুধুমাত্র হাইড্রোজেন ও কার্বন দ্বারা গঠিত যৌগসমূহকে হাইড্রোকার্বন বলা হয়। হাইড্রোকার্বনের সংকেত অনেক বিচিত্র হয় কারণ বিশ্বে বিভিন্ন আণবিক সংকেত বিশিষ্ট অসংখ্য হাইড্রোকার্বন বিদ্যমান। যেমন- CH4, C2H6, C2H4, C2H2, C6H6 প্রভৃতি। বিভিন্ন যৌগের আণবিক সংকেত নির্ণয়ের সাধারণ পদ্ধতি রয়েছে যা আমরা কোনো এক সময় জানবো। এছাড়া গ্যাস আয়তন সূত্রের সাহায্যেও হাইড্রোকার্বনসমূহের আণবিক সংকেত নির্ণয় করা যায়। নিম্নে এ পদ্ধতি আলোচনা করা হল।

 

হাইড্রোকার্বনের সংকেত নির্ণয়

এক্ষেত্রে পরীক্ষাধীন হাইড্রোকার্বন গ্যাসের একটি নমুনার আয়তন মেপে তাকে অতিরিক্ত পরিমাণ অক্সিজেনে দহন করা হয়। এ সময় হাইড্রোকার্বনের সব কার্বন পরমাণু কার্বন ডাইঅক্সাইডে এবং সব হাইড্রোজেন পরমাণু জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়।

2 CxH2y + (2x + y) O2 = 2x CO2 + 2y H2O

যেমন- 2 C2H6 (g) + 702 (g) = 4 CO2 (g) + 6 H2O (g)

উত্তপ্ত এই গ্যাস মিশ্রণে কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প ও অতিরিক্ত অক্সিজেন থাকে। এ গ্যাস মিশ্রণকে অনার্দ্র দানাদার ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের উপর দিয়ে প্রবাহিত করলে তা জলীয় বাষ্প শোষণ করে। সুতরাং গ্যাস মিশ্রণের আয়তন কমে যায়, এই কমে যাওয়ার পরিমাণ জলীয় বাষ্পের আয়তনের সমান। তারপর এই শুষ্ক গ্যাসকে চুন বা ক্যালসিয়াম অক্সাইডের উপর দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। তখন কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস শোষিত হয়। এ সময় গ্যাসের যে আয়তন কমে যায়, তা উৎপাদিত কার্বন ডাইঅক্সাইডের আয়তনের সমান।

CaO + CO2 → CaCO3

 

হাইড্রোকার্বনের আণবিক সংকেত গণনা

অ্যাভোগাড্রোর সূত্র মতে, একই তাপমাত্রা ও চাপে সমান আয়তনের সব গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে। সুতরাং এ সূত্র থেকে বলা যায়, যদি পরীক্ষাধীন হাইড্রোকার্বনের নমুনার আয়তন V mL হয় এবং এতে n সংখ্যক হাইড্রোকার্বন অণু থাকে, তবে V mL CO2 এ n সংখ্যক CO2 অণু এবং V mL জলীয় বাষ্পে n সংখ্যক H2O অণু থাকবে। যদি উৎপন্ন জলীয় বাষ্পের আয়তন V হয়, তবে তাতে H2O অণুর সংখ্যা

= (V1 / V) x n

= yn ; যেখানে y = V1 / V

যেহেতু এক অণু H2O এ দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু বিদ্যমান, সেহেতু উৎপন্ন জলীয় বাষ্পে সর্বমোট হাইড্রোজেন পরমাণুর সংখ্যা হবে 2 yn। এ 2 yn সংখ্যক হাইড্রোজেন পরমাণু n সংখ্যক হাইড্রোকার্বন অণুতে বিদ্যমান। সুতরাং একটি হাইড্রোকার্বন অণুতে হাইড্রোজেন পরমাণুর সংখ্যা = 2y।

একইভাবে বলা যায়, যদি উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইডের আয়তন V2 mL হয়, তবে তাতে CO2 অণুর সংখ্যা

= (V2 / V) x n

= xn ; যেখানে x = V2 / V

এক অণু কার্বন ডাইঅক্সাইড অণুতে একটি কার্বন পরমাণু বিদ্যমান। সুতরাং উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসে সর্বমোট কার্বন পরমাণুর সংখ্যা xn। এ সংখ্যক কার্বন পরমাণু n সংখ্যক হাইড্রোকার্বন অণুতে বিদ্যমান। অতএব একটি হাইড্রোকার্বন অণুতে কার্বন পরমাণুর সংখ্যা = x ।

অতএব হাইড্রোকার্বনের সংকেত হচ্ছে CxH2y

এখানে, x = V2 / V

= কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের আয়তন / হাইড্রোকার্বন গ্যাসের আয়তন

এবং y = V1 / V

= জলীয় বাষ্পের আয়তন / হাইড্রোকার্বন গ্যাসের আয়তন

এখানে উল্লেখ্য যে, সব গ্যাসের আয়তন একই তাপমাত্রা ও চাপে মাপতে হবে। তরল হাইড্রোকার্বনের ক্ষেত্রে তাকে প্রথমে উচ্চ তাপমাত্রায় বাষ্পে রূপান্তরিত করা হয় এবং সব মাপন সে তাপমাত্রায় করতে হয়।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *