পরমানু নিয়ে জানতে হলে আমাদের একটু পরমাণুর ইতিহাস দেখতে হবে। পরমানুর ধারনাটা অনেক পুরোনো। এখনকার সময় থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে লুপিয়াস নামক এক শিক্ষক এবং তার ছাত্র ডেমোক্রিটাস বিভিন্ন পদার্থের গঠন নিয়ে গবেষণা করতেন। ডেমোক্রিটাস ফুলের গন্ধ থেকে শুরু করে পানির গঠন নিয়েও গবেষণা করেছিলেন। তিনি মনে করতেন আমাদের বিশ্বে যা কিছু আছে, যেগুলোকে আমরা কঠিন, তরল কিংবা বায়বীয় পদার্থ বলে জানি তারা সবকিছুই অদৃশ্য এবং খুব ছোট ছোট অনেকগুলো অংশ নিয়ে তৈরি হয়েছে। এসব ছোট ছোট অংশগুলোকে আর ভাগ করা যায় না এবং খালি চোখেও দেখা যায় না। তিনি এসব অবিভাজ্য অংশগুলোর নাম দিয়েছিলেন Atoma. এভাবেই পরমাণুর ইতিহাস শুরু হয়।
Atoma দুটো গ্রীক শব্দ A (মানে হচ্ছে না) এবং temnein (মানে হচ্ছে ভাগ করা যায় না) থেকে এসেছে। অর্থাৎ Atoma হচ্ছে এমন একটা জিনিস যাকে আর ভাগ করা যায় না।
তবে Atom এর তত্ত্ব পরবর্তীতে টিকে থাকতে পারেনি বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটল (Aristotle)-এর মতবাদের জন্য। তিনি বলেন যে এই পৃথিবীতে প্রতিটা পদার্থকে অন্য পদার্থে রূপান্তর করা যায়। তিনি আরো বলে গেছেন যে প্রতিটা পদার্থকেই যত খুশি ভাগও করা যায়। অর্থাৎ তার মতে পদার্থের কোনো ক্ষুদ্রতম অংশ নেই।
কয়েকশ বছরের বেশি সময় ধরে সাধারন মানুষ এরিস্টটলের এই মতবাদ মানতে থাকেন। কিন্তু 1647 সালে গ্যাসেন্দি নামক একজন বিজ্ঞানী তার নিজের লেখা একটা বইতে “এরিস্টটলের মতবাদ ভুল” এটা নিয়ে তার যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি ডেমোক্রিটাসের পক্ষে যুক্তি দিয়ে লিখেছিলেন যে প্রতিটা পদার্থ অনেকগুলো ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে তৈরি যেগুলো কখনো আর ভাঙ্গা যায় না, এক কথায় তারা অবিভাজ্য। গ্যাসেন্দি বিশ্বাস করতেন মহাবিশ্বে অনেক ধরনের পরমানু আছে। এসব পরমানুগুলো বিভিন্ন ফর্মে বসে ভিন্ন ধরনের বস্তু বানাতে পারে। তিনি স্বাদ, তাপ এবং ঘ্রাণের জন্যও আলাদা পরমানু আছে বলে মনে করতেন। তিনিই প্রথম অনুর ধারনা দেন। যখন কোনো পদার্থে বিভিন্ন পরমানু জোট বেঁধে থাকে তখন সেই জোট বাঁধা অবস্থার পদার্থকে অনু বলে।
তবে পরমানু নিয়ে সবচেয়ে ভালো এবং গ্রহনযোগ্য তথ্যগুলো আসে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন ডাল্টনের হাত ধরে। তখন মোটামুটি সবাই পরমানুর অস্তিত্ব মেনে নেন। ডাল্টনের পর রাদারফোর্ড পরমানু নিয়ে মতবাদ দেন এবং ডাল্টনের মতবাদে যেসব ভুল ছিলো সেগুলোকে ঠিক করার চেষ্টা করেন রাদারফোর্ডের পর পরমানুকে নিয়ে নীলস বোর আরো কিছু তথ্য দেন যেগুলো পরমানু সম্পর্কে জানার পথ আরো সুগম করে দেয়। এই হচ্ছে পরমাণুর ইতিহাস।