আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল

আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল কাকে বলে নিয়ে আমরা এখানে জানবো। ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক ভিন্ন ভিন্ন হয়। এর কারণ হল পদার্থের গঠন প্রকৃতি। যে কোন পদার্থ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি। সমযোজী যৌগসমূহের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রতম কণাকে সে পদার্থের অণু বলা হয়। সমযোজী পদার্থের এ সব অণু পরস্পরের প্রতি এক প্রকার আকর্ষণ অনুভব করে, এ আকর্ষণকে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলে। অণুতে বন্ধন গঠনে ইলেকট্রনের ভাগাভাগির উপর এ আন্তঃআণবিক আকর্ষণের পরিমাণ নির্ভর করে। বিভিন্ন যৌগে আন্তঃআণবিক বলের পরিমাণ বিভিন্ন হয়।

আন্তঃআণবিক বলের ভিন্নতার কারণ ও এর প্রভাব

বিভিন্ন পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক তাদের আন্তঃআণবিক বলের পরিমাণের উপর নির্ভরশীল। আবার আন্তঃআণবিক বল কিছু নিয়ামক (factor) এর উপর নির্ভর করে। এসব নিয়ামকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আয়নিক যৌগের আয়নসমূহের মধ্যে স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বল ও কেলাসের ল্যাটিস শক্তি, সমযোজী যৌগ অণুর মেরুপ্রবণতা বা ডাই-পোল গঠন, আণবিক ভর ও পলিমার অণু গঠন ইত্যাদি। যেমন-

  • আয়নিক যৌগসমূহ কেলাস আকারে কঠিন অবস্থায় থাকে। যেমন, NaCl এর গলনাঙ্ক 815°C এবং আয়নিক যৌগকে তরল বা গ্যাসীয় করতে হলে আয়নসমূহের মধ্যবর্তী স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণকে অতিক্রম করার মত গতিশক্তি কেলাসের আয়নসমূহকে প্রদান করতে হবে। এ কারণে আয়নিক যৌগসমূহের গলনাঙ্ক ও সস্ফুটনাঙ্ক খুব বেশি হয়। আয়নিক যৌগের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রতম কণা হচ্ছে বিপরীত চার্জযুক্ত আয়নসমূহ। সুতরাং আয়নিক যৌগের ক্ষেত্রে “আন্তঃআণবিক আকর্ষণ” এর সাথে “আন্তঃআয়নিক আকর্ষণ-বিকর্ষণ” বিবেচনা করা হয়।
  • অপোলার সমযোজী যৌগ এবং যাদের আণবিক ভর কম সেগুলো গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে, কারণ তাদের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ পরিমাণ কম। যেমন, CH4, (সস্ফুটনাঙ্ক -162°C), C2H6 (স্ফুটনাঙ্ক -89°C) ইত্যাদি।
  • পোলার অণুসমূহের দু’প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক চার্জ ও ঋণাত্মক চার্জ থাকে। ফলে একটি অণুর ধনাত্মক প্রান্ত অপর অণুর ঋণাত্মক প্রান্তের দিকে আকৃষ্ট থাকে, যেমন, পোলার পানি অণু (HO) এর H প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক চার্জ ও OH প্রান্তে আংশিক ঋণাত্মক চার্জ থাকে। তাই পোলার সমযোজী যৌগসমূহ সাধারণত সাধারণ তাপমাত্রায় তরল। যেমন, পানি সাধারণ তাপমাত্রায় তরল, এর ফুটনাঙ্ক 100°C। কোন কোন ক্ষেত্রে পোলার সমযোজী যৌগ কঠিন অবস্থায় থাকে যেমন, চিনি বা সুগার (C12H22O11)।

আন্তঃআণবিক-আকর্ষণ-বল-কাকে-বলে

সমযোজী যৌগের ক্ষেত্রে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল

  • কঠিন পদার্থের বেলায়, আন্তঃআণবিক বল সবচেয়ে বেশি থাকে এবং আন্তঃআণবিক দূরত্ব সবচেয়ে কম হয়। অধিক আকর্ষণের কারণে অণুসমূহ যথাসম্ভব সন্নিকটে এসে নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে বলে নির্দিষ্ট আকৃতি লাভ করে, এ অবস্থাকে পদার্থের কঠিন অবস্থা বলে। যেহেতু কঠিন অবস্থায় আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বেশি থাকে, তাই অধিক তাপশক্তি প্রয়োগ করে ঐ আন্তঃআণবিক আকর্ষণকে অতিক্রম করতে হয়। যেমন কঠিন NaCl এর গলনাঙ্ক হল 815°C
  • তরল পদার্থের বেলায়, আন্তঃআণবিক আকর্ষণ কঠিন পদার্থের চেয়ে কম থাকে, কিন্তু আন্তঃআণবিক দূরত্ব বেশি হয়। তাই কম তাপশক্তি প্রয়োগ করে ঐ আন্তঃআণবিক আকর্ষণকে অতিক্রম করা যায়। যেমন, পানির স্ফুটনাঙ্ক হল 100°C.
  • গ্যাসীয় পদার্থের বেলায়, আন্তঃআণবিক আকর্ষণ খুবই কম থাকে এবং আন্তঃআণবিক দূরত্ব সবচেয়ে বেশি হয়। তাই গ্যাসীয় পদার্থকে নিম্ন তাপমাত্রায় শীতল করলে তাদের আন্তঃআণবিক দূরত্ব হ্রাস পেয়ে খুব নিকটে আসে ও তরলে পরিণত হয়। অর্থাৎ গ্যাসের সস্ফুটনাঙ্ক কক্ষতাপমাত্রা থেকে অনেক কম হয়। যেমন, N. গ্যাসের সস্ফুটনাঙ্ক হল- 196°C। অতএব এতক্ষণে একটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেলো আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল কাকে বলে সেটা নিয়ে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *