বিজ্ঞানী জুল ও থমসন ১৮৫২-৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে লক্ষ করেন যে, কোন গ্যাসকে অনেক বেশি চাপে সঙ্কুচিত করে হঠাৎ ছোট ছিদ্রযুক্ত প্লাগের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত করে কম চাপ বিশিষ্ট একটি বড় জায়গায় সম্প্রসারিত হতে দিলে গ্যাসটির তাপমাত্রা কমে যায়। এ প্রক্রিয়াকে জুল থমসন প্রভাব (Joule-Thomson effect) বলা হয়। এর কারণ গ্যাসের প্রসারণের সময় গ্যাসকে কাজ করতে হয়। যেমন, গ্যাস প্রসারিত হবার সময় এর সামনের গ্যাসকে ধাক্কা দিয়ে পেছনের দিকে সরাতে হয়। তখন গ্যাসের অণুগুলোকে তাদের আন্তঃআণবিক আকর্ষণের বিরুদ্ধে কাজ করে অনেক দূরে দূরে ছড়িয়ে পড়তে হয়। যদি এই আয়তনের প্রসারণ খুব দ্রুত ঘটে তখন গ্যাস অণুগুলো পরিবেশ থেকে তাপ শক্তি শোষণ করতে পারে না। তাই গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি ব্যবহৃত হয় এবং গ্যাসটির তাপমাত্রা কমে যায়।
গ্যাসের অণুসমূহের মধ্যে আকর্ষণ আছে ধরে নিয়ে জুল থমসন প্রভাব ব্যাখ্যা করা যায়। উচ্চচাপ বিশিষ্ট গ্যাসকে নিম্নচাপ বিশিষ্ট বা প্রায় শূন্য চাপ বিশিষ্ট এলাকায় সম্প্রসারিত হতে দিলে একে কোনো বাহ্যিক কাজ করতে হয় না। এ সম্প্রসারণ হঠাৎ সংঘটিত হওয়ায় কোনো তাপ এলাকা হতে বের হতে পারে না, বা ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না, অর্থাৎ রুদ্ধতাপীয় গ্যাসীয় সম্প্রসারণ ঘটে। তার সত্ত্বেও তাপমাত্রা কমার কারণ হচ্ছে অণুসমূহ আগে একে অপরের খুব কাছাকাছি ছিল, হঠাৎ সম্প্রসারণের ফলে এগুলো পরস্পর হতে দূরে সরে যায়, তখন তাদের মধ্যকার আকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। এ কাজ করতে যে শক্তির প্রয়োজন হয়, তা গ্যাসটির অভ্যন্তরীণ শক্তি হতে ধার নেয়, ফলে গ্যাসের তাপমাত্রাও কমে।
বাণিজ্যিকভাবে বায়ুর তরলীকরণ জুল-থমসন প্রভাব প্রক্রিয়ায় করা হয়। বায়ুকে তরলীভূত করার আগে তাকে কিছুটা ঠাণ্ডা করে তারপর জুল-থমসন সম্প্রসারণ ঘটিয়ে তাপমাত্রা অনেক ঠাণ্ডা করা হয় এবং এই সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া কয়েকবার ঘটিয়ে বায়ুর তাপমাত্রা অনেক বেশি কমানো হয়। পরে -200°C তাপমাত্রা এবং প্রায় 200 atm চাপে বায়ুকে তরলীভূত করা হয়।
হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস তরলীকরণ সবচেয়ে কঠিন। কেননা, -80°C তাপমাত্রার উপরে হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে এবং −240°C তাপমাত্রার উপরে হিলিয়ামের ক্ষেত্রে জুল-থমসন সম্প্রসারণে গ্যাসের তাপমাত্রা না কমে বরং বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তাপমাত্রা কমার পরিবর্তে গ্যাসের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াকে ঐ গ্যাসের উৎক্রম (inversion) তাপমাত্রা বলা হয়। অর্থাৎ H2 এর উৎক্রম তাপমাত্রা হল -80° C এবং হিলিয়ামের উৎক্রম তাপমাত্রা -240°C। গ্যাসের উৎক্রম তাপমাত্রা হল এমন একটি তাপমাত্রা যার থেকে কম তাপমাত্রায় গ্যাসটির রুদ্ধতাপীয় সম্প্রসারণ ঘটলে তা শীতল হয়ে থাকে। সুতরাং প্রথমে তরল বায়ু দ্বারা হাইড্রোজেনকে শীতল করে অতঃপর জুল-থমসন সম্প্রসারণ দ্বারা একে আরো শীতল করে উচ্চচাপে তরল করা হয়। অপরদিকে তরল হাইড্রোজেন দ্বারা হিলিয়াম গ্যাসকে যথেষ্ট ঠাণ্ডা করে তারপর জুল-থমসন সম্প্রসারণ ঘটিয়ে আরো শীতল করে প্রবল চাপ প্রয়োগ করে হিলিয়ামকে তরলিত করা হয়।