চোখ বন্ধ করলে কিছুই দেখা যায় না। আবার সম্পূর্ণ অন্ধকার স্থানে আমরা চোখ খোলা রাখলেও কোনো কিছু দেখতে পাই না। এখন কথা হচ্ছে আলোক শক্তি কাকে বলে? আলো হচ্ছে সেই জিনিস যার সাহায্যে আমরা দেখতে পাই। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ আলোর প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা করার চেষ্টা করে আসছে। মিশরিয় এবং গ্রিক দার্শনিকেরা মনে করতেন আমাদের চোখ হতে আলো কোনো বস্তুর উপর পড়লে আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই। নেহায়েত অনুমান নির্ভর এ ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না বলে এ ধারণা কখনো গ্রহণযোগ্য হয়নি। দশম শতকের শেষের দিকে আরবীয় বিজ্ঞানী আল হাসান, ইউরোপে যিনি আল হ্যাজেন নামে পরিচিত, পরীক্ষা নিরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করেন যে কোনো বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়লেই সেই বস্তু আমরা দেখতে পাই।
আলো এক প্রকার বিকীর্ণ শক্তি তরঙ্গ। এই বিকীর্ণ শক্তি তরঙ্গ সৃষ্টি করে স্পন্দন সহকারে উৎস থেকে সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আলোর গতিবেগ মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল। শূন্যে আলোর বেগ সেকেন্ডে প্রায় 2.9979 x 10^8 m (সংক্ষেপে 3 x 10^5 m বা, 3 x 10^10 cm)। শূন্য স্থানের মধ্যে কোনো বস্তুই আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলতে পারে না। এ শক্তির উপস্থিতিতে আমরা বিভিন্ন বস্তু দেখতে পাই কিন্তু আলো নিজে অদৃশ্য। আলোকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় : আলো এক প্রকার শক্তি বা বাহ্যিক কারণ যা চোখে প্রবেশ করে দর্শনের অনুভূতি জন্মায়।
আলোক শক্তি তরঙ্গ হওয়ায় আলোর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য রয়েছে এবং স্পন্দন সংখ্যা বা কম্পাঙ্ক বা ফ্রিক্যুয়েন্সি (frequency) রয়েছে, যা নিম্নরূপে পরস্পরের সাথে ব্যস্তানুপাতিক হয়ে থাকে।
nλ = v (শব্দের বেগ), এখানে = λ তরঙ্গদৈর্ঘ্য
υλ = c (আলোর বেগ)
স্পন্দন সংখ্যা বা কম্পাঙ্ককে আলোর বেলায় υ (‘নিউ’ উচ্চারণ) দ্বারা ও শব্দের বেলায় n দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অবশ্য আলোর বেলায় এর মান খুব বেশি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে তাকে c দ্বারা ভাগ করে υ (‘নিউ-বার’) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
υ প্রকৃতপক্ষে প্রতি সেন্টিমিটারে তরঙ্গ-সংখ্যা প্রকাশ করে। এ কারণে υ কে তরঙ্গ-সংখ্যা (wave number) বলা হয়।
আলোক শক্তি কাকে বলে এটা নিয়ে আশা করি কিছুটা ধারণা পেয়েছো। আলোর তরঙ্গ নিজে অদৃশ্য, কিন্তু যে আলোর তরঙ্গ অন্য বস্তুকে দৃশ্যমান করে, তাকে দৃশ্যমান আলো বলে। এ দৃশ্যমান আলো ছাড়াও আরো অনেক অদৃশ্য আলো আছে। যেমন, গামা রশ্মি, রঞ্জন রশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি, অবলোহিত রশ্মি, রেডিও ও টেলিভিশনের তরঙ্গ প্রভৃতি। এদের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে এদের তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ও ফ্রিক্যুয়েন্সি বা স্পন্দন সংখ্যায়।
বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল (Maxwell) প্রমাণ করেন যে, সব ধরনের দৃশ্য ও অদৃশ্য আলোর উৎপত্তি বিদ্যুৎ ও চুম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে হয়। এজন্য সব ধরনের আলোককে একত্রে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ রশ্মি বলা হয়। দৃশ্যমান আলো হল বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ রশ্মির সামান্য অংশ মাত্র। সমগ্র বিকিরণ শক্তির অধিকাংশই অদৃশ্য।