প্লাঙ্কের ধ্রুবকের মান কত

আমরা এ পর্যন্ত জেনেছি আলোক এক প্রকার শক্তি তরঙ্গ। সুতরাং তা নিরবচ্ছিন্ন (continuous) হওয়া উচিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত এ ধারণার প্রচলন ছিল। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ম্যাক্স প্লাঙ্ক (Max Plank, 1858–1947) আলো সম্পর্কে সম্পূর্ণ এক নতুন তত্ত্ব প্রদান করেন। তিনি একটা ধ্রুবক আবিষ্কার করেন যাকে প্লাঙ্কের ধ্রুবক বলে। প্লাঙ্কের ধ্রুবকের মান কত সেটা আমরা জেনে যাবো।

প্লাঙ্কের মতে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের শক্তি নিরবিচ্ছিন্ন নয় বরং কোয়ান্টাইজড অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন। অর্থাৎ আলো নিরবচ্ছিন্ন নয়, পদার্থ হতে বিকিরিত আলোক শক্তি বিচ্ছিন্নভাবে নির্দিষ্ট একক পরিমাণে ক্ষুদ্র শক্তির প্যাকেট হিসাবে বের হয়। শক্তির এই নির্দিষ্ট এককের নাম দেয়া হয় ফোটন (photon) বা আলোর এক কোয়ান্টাম শক্তি (quantum, বহু বচন quanta)। ফোটনের শক্তির পরিমাণ (E) এর বিকিরণের স্পন্দন সংখ্যার (V) সমানুপাতিক-

E ∝ υ

or, E = hυ

এখানে E হচ্ছে শক্তি, h হচ্ছে প্ল্যাংকের ধ্রুবক, যার মান 6.626×10-34 Js, υ হচ্ছে কম্পাঙ্ক। তাহলে প্লাঙ্কের ধ্রুবকের মান কত সেটা তোমরা জেনে ফেললে। এ থেকে বোঝা যায় যে প্রত্যেক তাপমাত্রার জন্য একটি কৃষ্ণ বস্তু থেকে বিকিরণের তীব্রতার একটি সর্বোচ্চ মান রয়েছে। তার মানে এই তত্ত্ব অনুযায়ী বিকিরণের তীব্রতা, তাপমাত্রা বাড়ার সাথে একইভাবে বাড়বে না। ম্যাক্স প্ল্যাংকের কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী শক্তি শুধুমাত্র এর ক্ষুদ্রতম এককের গুণিতক আকারে জমা হয় কিংবা ভেঙ্গে যায়। ম্যাক্স প্ল্যাংক শক্তির এই ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন কোয়ান্টাম।

এই সমীকরণ থেকে একটা সিদ্ধান্তে আসা যায়- যেকোনো বিকিরণের কোয়ান্টাম শক্তি তার কম্পাঙ্ক ও প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের গুণফলের সমান। কম্পাঙ্ক বাড়লে কোয়ান্টামের শক্তিও বাড়ে। লাল আলোর বিকিরণের চেয়ে বেগুনি আলোর বিকিরণের কম্পাঙ্ক বেশি। তাই বেগুনি আলোর কোয়ান্টাম শক্তিও লাল আলোর চেয়ে বেশি।

এবার খুব সহজেই প্ল্যাঙ্কের সূত্রে আমরা তরঙ্গ দৈর্ঘ্য নিয়ে আসতে পারি। আমরা জানি আলো বা বিকিরণের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্ক পরস্পরের ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ বিকিরণের কম্পাঙ্ক বাড়লে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কমে। কম্পাঙ্ক এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সম্পর্ক হচ্ছে- υ = 1/λ

এটা এখন প্ল্যাঙ্কের সমীকরণে বসালে পাওয়া যাবে-

E = h / λ

এই সমীকরণ থেকে বিকিরণের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বাড়লে বিকিরণের শক্তি কমতে থাকবে।

বিকিরণ যে সর্বনিন্ম শক্তিতে হয় সেটাকে শক্তির একটা প্যাকেট বলা যেতে পারে। এই প্যাকেটই হলো বিকিরণের ক্ষুদ্রতম একক। উৎস থেকে বিকিরণ বা আলো নির্গত হয় প্যাকেট আকারেই। কিন্তু প্রচন্ড গতিতে একের পর এক প্যাকেট নির্গত হয়। তাই প্রতিটা প্যাকেট আলাদাভাবে আমাদের মস্তিষ্ক অনুধাবন করতে পারে না। সত্যি বলতে কি আমাদের চোখ ও মস্তিষ্ক প্রায়ই আমাদের বিভ্রান্ত করে। তাই আমরা মনে করি আলো বা যেকোনো বিকিরণ অবিচ্ছিন্নভাবে নির্গত হয়।

Where,

h = Planck’s Constant = 6.626×10-34 Js

k = Boltzmann’s Constant = 1.381 × 10-23 J/K